ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ায় সাংবাদিককে মৃত্যুদণ্ড দিলো ইরান
ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রুহুল্লাহ জামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে অসন্তোষ সৃষ্টির উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, শনিবার রুহুল্লাহ জামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বহাল রাখে। খবর বিবিসির।
গত জুন মাসে ইরানের একটি আদালত রুহুল্লাহ জাম নামের এই সাংবাদিকের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে দেশে দুর্নীতি ছড়ানোর অভিযোগ ছিলো। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিশ্চিত করার বাইরে আর কোনো বিস্তারিত সংবাদ পাওয়া যায়নি।
জামের ওয়েবসাইট আমাদনিউজ এবং জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে তিনি যে চ্যানেল তৈরি করেছিলেন, বিক্ষোভের মধ্যে সেই চ্যানেলের মাধ্যমে এমন কিছু তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যা ইরানের শিয়া শাসনকে দারুণ লজ্জার মুখে ফেলে দেয়।
২০০৯ সালে হওয়া গ্রিন মুভমেন্টের পর ২০১৭ সালের বিক্ষোভই ছিলো ইরানে সবচেয়ে বড় অস্থিরতা। ২০১৯ সালে নভেম্বরেও একই রকম প্রতিরোধের মুখে পড়ে ইরান সরকার।
২০১৭ সালের বিক্ষোভটি প্রাথমিকভাবে শুরু হয় হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পণ্যের দামের কারণে। বেশির ভাগ ইরানির বিশ্বাস ছিলো ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই এই বিক্ষোভে মদদ দিয়েছেন।
বিক্ষোভটি শহর থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ইরানি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই বিক্ষোভকারিরা একটি বড় প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সরাসরি প্রেসিডেন্ট রুহানিকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। এমন কি সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকেও চ্যালেঞ্জ জানান অনেকে। এই সবের ভিডিও শেয়ার হয়েছিলো রুহুল্লাহর টেলিগ্রাম চ্যানেলে।
চ্যানেলটি বিক্ষোভকে আরো জোরদার করার জন্য নানা রকম তথ্যও প্রচার করা হয়েছিলো।
রাষ্ট্রীয় অভিযোগের পর টেলিগ্রাম রুহুল্লাহর চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়। ইরানের পক্ষ এথেক অভিযোগ করে বলা হয়েছিলো রুহুল্লাহর চ্যানেলে পেট্রোল বোমা বানানোর কৌশল শেখানো হয়।
অবশ্য রুহুল্লাহ পরে ভিন্ন নামে চ্যানেলটি চালানো শুরু করেন।
রুহুল্লাহ অবশ্য পরে টেলিগ্রামে কোনো রকম সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন, এবং তিনি বিদেশি গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে কাজ করেন, এমন অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
২০১৭ সালের সেই বিক্ষোভে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫০০ জনকে ইরানি বাহিনী আটক করে।
২০১৭ সালের পর কোনো এক সময়ে রুহুল্লাহ রাজনৈতিক আশ্রয়ে ফ্রান্সে চলে যান এবং প্যারিসে বসবাস করতে শুরু করেন।
কিন্তু ইরানের গোয়েন্দারা কৌশলে তাকে ফাঁদে ফেলে এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, গোয়েন্দা বাহিনী প্রতারণার মাধ্যমে তাকে ফাঁদে ফেলে এবং একটি জটিল অভিযানে রুহুল্লাহকে আটক করা হয়। যদিও এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ইরান।
ফ্রান্স এই ঘটনাকে বাকস্বাধীনতা ও ইরানের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বিরাট এক হুমকি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
জাম সংস্কারবাদী একজন শিয়া ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ আলি জামের সন্তান। তার বাবা ১৯৮০-এর দশকে ইরান সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইরানি সংবাদ মাধ্যমে এক চিঠি দিয়ে তার বাবা দাবি করেন যে, আমাদনিউজে রুহুল্লাহ যা করেন, তা তিনি সমর্থন করেন না।